ছাড়পত্র
যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে তার মুখে খবর পেলুম: সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক, নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার জন্মমাত্র সুতীব্র চীৎকারে। খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত উত্তোলিত, উদ্ভাসিত কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়। সে ভাষা বোঝে না কেউ, কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার। আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের- পরিচয়-পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে। এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান; জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে। চলে যেতে হবে আমাদের। চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য ক'রে যাব আমি- নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার। অবশেষে সব কাজ সেরে, আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে করে যাব আশীর্বাদ, তারপর হব ইতিহাস।।
আগামী
জড় নই, মৃত নই, নই অন্ধকারের খনিজ, আমি তো জীবন্ত প্রাণ, আমি এক অঙ্কুরিত বীজ; মাটিতে লালিত ভীরু, শুধু আজ আকাশের ডাকে মেলেছি সন্দিগ্ধ চোখ, স্বপ্ন ঘিরে রয়েছে আমাকে। যদিও নগণ্য আমি, তুচ্ছ বটবৃক্ষের সমাজে তবু ক্ষুদ্র এ শরীরে গোপনে মর্মরধ্বনি বাজে, বিদীর্ণ করেছি মাটি, দেখেছি আলোর আনাগোনা শিকড়ে আমার তাই অরণ্যের বিশাল চেতনা। আজ শুধু অঙ্কুরিত, জানি কাল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাতা উদ্দাম হাওয়ার তালে তাল রেখে নেড়ে যাবে মাথা: তারপর দৃপ্ত শাখা মেলে দেব সবার সম্মুখে, ফোটাব বিস্মিত ফুল প্রতিবেশী গাছেদের মুখে। সংহত কঠিন ঝড়ে দৃঢ়প্রাণ প্রত্যেক শিকড়: শাখায় শাখায় বাধা, প্রত্যাহত হবে জানি ঝড়; অঙ্কুরিত বন্ধু যত মাথা তুলে আমারই আহ্বানে জানি তারা মুখরিত হবে নব অরণ্যের গানে। আগামী বসন্তে জেনো মিশে যাব বৃহতের দলে; জয়ধ্বনি কিশলয়ে: সম্বর্ধনা জনাবে সকলে। ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই- জানি আমি ভাবী বনস্পতি, বৃষ্টির, মাটির রসে পাই আমি তার তো সম্মতি। সেদিন ছায়ায় এসো: হানো যদি কঠিন কুঠারে, তবু তোমায় আমি হাতছানি দেবো বারে বারে; ফল দেব, ফুল দেব, দেব আমি পাখিরও কূজন একই মাটিতে পুষ্ট তোমাদের আপনার জন।।
|