অদ্ভুত আঁধার এক
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা; যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই- প্রীতি নাই- করুণার আলোড়ন নেই পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া। যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব'লে মনে হয় মহত্ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।
আকাশলীনা
সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়োনাকো তুমি, বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে; ফিরে এসো সুরঞ্জনাঃ নক্ষত্রের রূপালি আগুন ভরা রাতে; ফিরে এসো এই মাঠে , ঢেউয়ে; ফিরে এসো হৃদয়ে আমার; দূর থেকে দূর - আরো দূরে যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর। কী কথা তাহার সাথে? -তার সাথে! আকাশের আড়ালে আকাশে মৃত্তিকার মত তুমি আজ: তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে। সুরঞ্জনা, তোমার হৃদয় আজ ঘাস: বাতাসের ওপারে বাতাস -আকাশের ওপারে আকাশ।
আবার আসিব ফিরে
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শাঁখচিল শালিকের বেশে, হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়। হয়তো বা হাঁস কোনো- কিশোরীর- ঘুঙুর রহিবে লাল পায় সারাদিন কেটে যাবে কল্মীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে। আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে জলঙ্গীর ঢেউএ ভেজা বাংলারই সবুজ করুণ ডাঙ্গায়। হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে। হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমূলের ডালে। হয়তো খৈয়ের ধান সরাতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে। রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে ডিঙ্গা বায়; রাঙ্গা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে দেখিবে ধবল বক; আমারে পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে।
বনলতা সেন
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি ; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে সেখানে ছিলাম আমি ; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে; আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন। চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের 'পর হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর, তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ' এতোদিন কোথায় ছিলেন?' পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন। সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল; পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল; সব পাখি ঘরে আসে--সব নদী--ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন; থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
হায় চিল
হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে! তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে! পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে; আবার তাহারে কেন ডেকে আনো ? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে! হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে তুমি আর উড়ে উড়ে কেঁদো নাকো ধানসিড়ি নদীটির পাশে!
|